Menu

কোমর ও অন্যান্য ব্যথা

বিভিন্ন ব্যথা ও তার আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিশদে জানুন। ফোন করুন +৯১৯৩৩৯৬৫৭৮৫৭

হাঁটু ব্যথা

 

হাঁটু হল আমাদের শরীরের সবথেকে বড় জয়েন্ট গুলির একটি। এই জয়েন্ট শুধু আমাদের শরীরের ওজন বহন করে তাই নয় আমাদের স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে ও সোজা হয়ে দাঁড়াতে, দৌড়াতে ও বসতেও সাহায্য করে। খেলাধুলা বা দৌড়াদৌড়ি করার সময় আমাদের হাঁটু অনেক ধকল সহ্য করে।

একটু অ্যানাটমি -

  • হাঁটুর জয়েন্ট তৈরি হয় মূলত তিনটি হাড় দিয়ে, FEMUR বা উরুর হাড়, PATELA বা মালাই চাকি ও TIBIA বা শিন বোন দিয়ে।
  • অনেক টেবিল বা চেয়ার এর নিচে যেমন শক্ত রবার কিম্বা প্লাস্টিক এর আবরন থাকে, তেমনি এই সব হাড়ের শেষপ্রান্ত কার্টিলেজ বা তরুনাস্থি দিয়ে ঢাকা থাকে, যাতে হাঁটুর জয়েন্ট-এ ঘর্ষণ বা আঘাত কম লাগে এবং ঘর্ষণ জনিত ক্ষয় কম হয়।    
  • সমগ্র জয়েন্ট -এর ভিতরটি সায়নোভিয়াল মেমব্রেন বা ঝিল্লি দিয়ে ঢাকা থাকে। এই সায়নোভিয়াল মেমব্রেন সায়নোভিয়াল ফ্লুইড তৈরি করে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মোটরগাড়ির ইঞ্জিন অয়েল যেমন ঘর্ষণ জনিত ক্ষয় রোধ করে, ঠিক তেমনি সায়নোভিয়াল ফ্লুইড হাঁটুর ঘর্ষণ জনিত ক্ষয় রোধ করে।
  • সমগ্র হাঁটুর জয়েন্টটি কয়েকটি লিগামেন্ট ও ক্যাপসুল দিয়ে জোড়া থাকে। তার উপর থাকে মাংসপেশি যা হাঁটুর জয়েন্টটির বিভিন্ন মুভমেন্ট-এ সাহায্য করে।
  • হাঁটুর জয়েন্ট এর চারপাশে থাকে সূক্ষ্ম নার্ভের জালিকা, যা হাঁটু তে তৈরি হওয়া ব্যথার অনুভূতি ব্রেইন-এ পাঠিয়ে দেয়, এবং আমরা হাঁটু ব্যাথা অনুভব করি। এই নার্ভ গুলি যদি ব্লক করে দেওয়া হয়, হাঁটুর ব্যথা বন্ধ হয়ে যাবে।

হাঁটুর ব্যথার কারনঃ

বিভিন্ন কারনে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে।

  • কম বয়সের(৪০ বছর বয়সের কম) হাঁটু ব্যথা সাধারনত হয় চোট-আঘাত থেকে যেমন লিগামেন্ট বা কার্টিলেজ ছিঁড়ে যাওয়া থেকে; অথবা প্রদাহ থেকে যেমন রিউমাটএড আরথ্রাইটিস বা স্পনডাইলো আরথ্রাইটিস থেকে।  
  • বেশি বয়সের(৪০ বছর বয়সের বেশি) হাঁটু ব্যথা সাধারনত হয় অষ্টিও আর্থরাইটিসের থেকে। হাঁটু ব্যথার সবচেয়ে বড় কারন এটি।
  • হাঁটু ব্যথার অন্যান্য কারণগুলি খুব বেশি দেখা যায় না, এবং আমরা মূলত অষ্টিও আর্থরাইটিস নিয়ে আলোচনা করব।

অষ্টিও আরথ্রাইটিস কি?

  • এটি একটি ক্ষয়জনিত রোগ।
  • ধীরে ধীরে হাঁটুর কার্টিলেজের ক্ষয় হতে থাকে, হাড়ের ক্ষয় প্রাথমিকভাবে হয় না।  
  • কার্টিলেজের ক্ষয় হতে থাকে বলে এটি অমসৃণ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে কার্টিলেজের উচ্চতা কমে যায় এবং হাড় গুলোর মাঝের ফাঁক কমে যায়।
  • কার্টিলেজের ক্ষয়এর ফলে এর ঠিক উপরেই থাকা সায়নোভিয়াল ফ্লুইড উৎপন্নকারী গ্রন্থিগুলিরও ক্ষয় হয় এবং সায়নোভিয়াল ফ্লুইড কম তৈরি হয়।
  • সায়নোভিয়াল ফ্লুইড কম তৈরি হওয়ার ফলে ঘর্ষণজনিত ক্ষয় আরও বেশি করে হতে থাকে।
  • এর ফলে হাঁটুর হাড়গুলোর একে অপরের সঙ্গে ঘর্ষণ হয়, এবং ব্যথার উৎপন্ন হয়।

অষ্টিও আরথ্রাইটিস এর পরিবর্তন গুলি চক্রাকারে চলতে থাকে এবং ধীরে ধীরে রোগটি বাড়তেই থাকে।

হাঁটুর অষ্টিও আরথ্রাইটিস কারণ কী?

হাঁটুর অষ্টিও আর্থরাইটিস বয়সজনিত ক্ষয়রোগ হিসাবে পরিচিত। যদিও বয়স ছাড়াও বিভিন্ন কারণে হাঁটুর অষ্টিও আর্থরাইটিস হতে পারে। যেমন –

  • প্রধান কারন হল বয়স।  
  • ওজন বেশী হলে হাঁটুর ওপর ধকল বেশী হয়।
  • হাঁটুর গাঁটে আঘাত লাগলে হাঁটুর ক্ষতি হতে পারে।
  • ভারী জিনিস তোলা, হাঁটু ভাঁজ করা, সিঁড়ি দিয়ে ক্রমাগত ওঠানামা করা, ফুটবল খেলা প্রভৃতি এসবেও হাঁটুর ওপর ধকল হয়।
  • এছাড়া কার্টিলেজের ক্ষয়ের জন্য বংশগত কারণও থাকে।
  • কম বয়সের হাঁটুর সমস্যা যেমন লিগামেন্ট বা কার্টিলেজ ছিঁড়ে যাওয়া, অথবা রিউমাটএড আরথ্রাইটিস বা স্পনডাইলো আরথ্রাইটিস থাকলে এবং তার চিকিৎসা ঠিক মত না হলে, অষ্টিও আর্থরাইটিস কম বয়সেই শুরু হতে পারে।

হাঁটুর অষ্টিও আরথ্রাইটিস এর লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো কী?

  • হাঁটুর অষ্টিও আরথ্রাইটিস এর প্রধান লক্ষণ হল হাঁটুর ব্যথা।
  • সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা বা পরিশ্রমের পর হাঁটুর ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা অনেকক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর হাঁটু আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া।
  • চলাফেরা করার সময় হাঁটুর গাঁটে শব্দ হওয়া।
  • হাঁটু ফুলে যাওয়া।
  • উরুর মাংসপেশীর ক্ষয় হয়ে যাওয়া।
  • হাঁটু ভাঁজ করার সময় ব্যথা হয়।
  • ধীরে ধীরে সামান্য নড়াচড়াতেও অসহ্য ব্যথা ও অস্বস্তি হয়। এবং হাঁটু নড়ানো যায় না।
  • হাঁটুর গাঁট আড়ষ্ট হয়ে যায়। বসে থাকা অবস্থাতেও ব্যথার অনুভুতি।

দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যথা চলতে থাকলে তা স্বাভাবিক জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন -

  • রোজকার কাজকর্ম, রান্না করা এছাড়া সাংসারিক অন্যান্য কাজকর্মে  বাধা সৃষ্টি করে।
  • ঘুমের ব্যঘাত ঘটায়।
  • কাজকর্ম না করতে পারার কারণে ওজন বেড়ে যায়।
  • বিষণ্ণতা দেখা দেয়।
  • কোন প্রতিযোগিতা বা খেলায় অংশগ্রহণ করতেও বাধা সৃষ্টি করে।

হাঁটুর অষ্টিও আরথ্রাইটিসএর চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?

১। জীবন যাত্রার নিয়ন্ত্রণ

২। ব্যায়াম

৩। মুখে খাওয়ার ওষুধ

৪। ইঞ্জেক্সন এবং ইন্টারভেন্সন পদ্ধতি

        ক) ভিসকো সাপ্লিমেনটেসন

        খ) প্লেটলেট রিচ প্লাসমা ইঞ্জেক্সন

        গ) রেডিও ফ্রিকোএন্সি নার্ভ ব্লক পদ্ধতি

৫। অপারেশন বা হাঁটু বদলানো

এর মধ্যে প্রথম তিনটি প্রাথমিক পর্যায়-এর চিকিৎসা। তবে বেশিরভাগ সময়েই বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি একসাথে করা হয়। আমরা প্রতিটি পদ্ধতি আলোচনা করব।

১। জীবন যাত্রার নিয়ন্ত্রণ

  • শরীরের ওজনঃ

হাঁটু যেহেতু শরীরের ওজন বহন করে তাই অতিরিক্ত ওজন হওয়ার ফলে হাঁটুর উপর চাপ পড়ে। এক্ষেত্রে অ্যারোবিক ব্যায়াম ওজন কমাতে ও শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এগুলির সাথে সাথে খাবার-দাবার ও নিয়ন্ত্রন করতে হবে।

মনে রাখতে হবে যে, শরীরের ওজন কম না করতে পারলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন।

  • খাবার-দাবারঃ

ভাজাভুজি খাবার, কেক, বিস্কুট প্রভৃতি শর্করা জাতীয় খাবার কম খাওয়া। এগুলি ওজন বাড়িয়ে দেয়।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (আখরোট বা তিসি বীজ), ভিটামিন সি (পেয়ারা, আনারস, পেঁপে, টমেটো), ভিটামিন ই (সূর্যমুখীর তেল, আমন্ড, পালং শাক, ব্রোকোলি), ভিটামিন ডি (সালমন, সার্ডাইন, চিংড়ি প্রভৃতি মাছ ও ডিম), বিটা-ক্যারোটেন (গাজর, টমেটো, ক্যাপসিকাম, পালং শাক, পুদিনা পাতা, রাঙা আলু) যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া।

২। ব্যায়াম

হাঁটুর অষ্টিও আর্থরাইটিস সাধারণত উরুর পেশীকে দুর্বল করে দেয়। তাই উরুর পেশী মজবুত করা প্রয়োজন কারণ এই পেশী হাঁটুর গাঁটের কিছুটা চাপ নেয় এবং হাঁটুকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। পেশী মজবুত করার জন্য কিছু ব্যায়াম অবশ্যই করতে হবে। মনে রাখতে হবে বেশিরভাগ বেল্ট মাংসপেশিকে দুর্বল করে এবং হাঁটুর ক্ষতি করে। এগুলি ব্যবহার না করাই উচিৎ।

নিম্ন লিখিত ব্যায়াম গুলি রোজ করতে থাকুন।

  1. Isometric Quadriceps exercise:

সোজা হয়ে পা সোজা করে বসুন। তারপর একটি তোয়ালে রোল করে হাঁটুর নিচে রেখে হাঁটু দিয়ে তোয়ালেতে চাপ দিন। এইভাবে ১০ সেকেন্ড থাকুন। শরীরের অন্যান্য অংশ স্বাভাবিক রাখুন এবং স্বাভাবিক ভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিন।  এইভাবে অপর পায়ে করুন। এই রকম ১০ বার করুন।

  1. Isometric Hamstring exercise:

প্রথমে সোজা হয়ে বসুন। পা দুটো অর্ধেক ভাঁজ করুন। এবার একটি পায়ের গোড়ালি দিয়ে মেঝেতে চাপ দিন। এইভাবে ১০ সেকেন্ড থাকুন। এরপর অপর পায়ে করুন। এটি ১০ বার করুন।

  1. VMO (Vastus medialis obliqus) strengthening exercise:

প্রথমে সোজা হয়ে বসুন। তারপর একটি বালিশ হাঁটুর নিচে রাখুন। তাহলে দেখা যাবে হাঁটুটি অর্ধেক ভাঁজ করা অবস্থায় আছে। এরপর হাঁটু দিয়ে বালিশের ওপর চাপ দিন। যে হাঁটু দিয়ে বালিশের ওপর চাপ দেবেন ওই পায়ের গোড়ালি সামান্য ওপরে উঠবে। এই ভাবে ১০ সেকেন্ড থাকুন ও এটি ১০ বার করুন।

  1. Quadriceps strengthening exercise:

প্রথমে একটি চেয়ারের ওপর বসুন। এরপর ধীরে ধীরে একটি পা সোজা করে ওপরে তুলতে থাকুন। পা টি সোজা অবস্থায় আসলে ১০ সেকেন্ড ধরে থাকুন। এরপর পা নিচে নামিয়ে নিন ও অপর পায়ে করুন। এই ভাবে ১০ বার করুন।

  1. Hamstring stretching exercise:

প্রথমে একটি পা ঝুলিয়ে ও একটি পা সোজা রেখে বসুন। তারপর ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকে যে পা টি সোজা অবস্থায় আছে সেই পায়ের আঙুল স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। (তবে খেয়াল রাখবেন কোমর থেকে শিরদাঁড়া যেন সোজা অবস্থায় থাকে)। অপর হাত ওই পায়ের হাঁটুর ওপর রাখতে হবে যাতে হাঁটুর স্থিতি বজায় থাকে। এইভাবে ৩০ সেকেন্ড রাখুন এবং এটি ৩-৫ বার করুন।

  1. Gastrocnemius stretching exercise:  

প্রথমে একটি পা ঝুলিয়ে ও একটি পা সোজা রেখে বসুন। এরপর একটি তোয়ালে নিয়ে ফাঁস তৈরি করুন। এরপর সেই ফাঁসটি পায়ের পাতার সামনের দিকে রেখে তোয়ালের ২ দিক দুহাত দিয়ে ধরুন। এরপর পিছনের দিকে ঝুঁকে দুহাত দিয়ে তোয়ালে ধরে টানুন। এইভাবে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। এটি ৩-৫ বার করুন।

৩। মুখে খাওয়ার ওষুধঃ

  • ব্যথার ওষুধ – এটি হাঁটুর অষ্টিও আর্থরাইটিসের লক্ষণ গুলো কমাতে সাহায্য করে। সাধারনত হাল্কা ব্যথার ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুব কম তেমন ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
  • কম মাত্রার ডিপ্রেশন-এর ওষুধ ব্যথার অনুভূতির তীব্রতাকে কমিয়ে দেয়। এবং এটি একটি ইউ এস এফ ডি এ অনুমোদিত ওষুধ যা অষ্টিও আরথ্রাইটিসএর চিকিৎসা ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত।
  • কনড্রয়টিন এবং গ্লুকোসামিন যা কার্টিলেজ বা তরুনাস্থি গজাতে সাহায্য করে বলে ভাবা হত, (যা এককালে ভীষণভাবে ব্যবহার করা হয়েছে), আজকাল আর ব্যবহার করা হয় না। বিভিন্ন গবেষণায় মুখে খাওয়ার এই ওষুধগুলির কার্যকারী ভূমিকা প্রমাণিত করা যায়নি।

৪। ইঞ্জেক্সন এবং ইন্টারভেন্সন পদ্ধতি

 ক) ভিসকো সাপ্লিমেনটেসন

 এটি একটি পদ্ধতি যেখানে সায়নোভিয়াল ফ্লুইড হাঁটুতে ইঞ্জেক্সন করা হয়। এটি হাঁটুর জয়েন্ট-কে ল্যুব্রিকেট করে, ফলে ঘর্ষণ জনিত ক্ষয় কমে যায় এবং ব্যথা কম হয়।

হাঁটুর ভেতরের তরলকে সায়নোভায়াল ফ্লুইড বলা হয়। অষ্টিও আর্থরাইটিসে সায়নোভিয়াল ফ্লুইড উৎপন্নকারী গ্রন্থিগুলির ক্ষয় হয় এবং সায়নোভিয়াল ফ্লুইড কম তৈরি হয়। সায়নোভিয়াল ফ্লুইড কম তৈরি হওয়ার ফলে ঘর্ষণজনিত ক্ষয় আরও বেশি করে হতে থাকে। ভিস্কোসাপ্লিমেন্টেশনে স্বাস্থ্যকর সায়নোভিয়াল ফ্লুইড সরাসরি হাঁটুর গাঁটের ফাঁকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এটি জয়েন্টকে ল্যুব্রিকেট ও ক্যুশন করে, ক্ষয় রোধ করে, হাঁটুর আড়ষ্টতা ও ব্যথা কম করে।   

 ভিস্কোসাপ্লিমেন্টেশন হাঁটুর অষ্টিও আর্থরাইটিসের চিকিৎসার জন্য ইউ এস এফ ডি এ দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। হাঁটুর অষ্টিও আর্থরাইটিসের চিকিৎসার একটি বিকল্প হিসাবে এর ব্যবহার, দ্য আমেরিকান কলেজ অফ রিউম্যাটোলজী এবং অষ্টিও আর্থরাইটিস রিসার্চ সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা সুপারিশকৃত।       

 খ)  প্লেটলেট রিচ প্লাসমা ইঞ্জেক্সন

প্রত্যেক মানুষের শরীরেই কিছু গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে যা চোট আঘাত সারিয়ে তোলে। রোগীর শরীর থেকে রক্ত নেওয়া হয় এবং এই গ্রোথ ফ্যাক্টরগুলি যে অংশে থাকে, সেই প্লেটলেট অংশ টুকুকে আলাদা করে নেওয়া হয় বিশেষ ফিলটার এবং সেন্ট্রিফিউগেশন পদ্ধতি দ্বারা। তারপর বিশেষ পদ্ধতিতে এটি হাঁটুর নির্দিষ্ট অংশে ইনজেকশন দ্বারা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সারা বিশ্বে এই অত্যাধুনিক পদ্ধতি এখন বেশ জনপ্রিয়। এটি হাঁটুর ক্ষয় রোধ করে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত অংশটুকুকে সারিয়ে তোলে। 

 গ) রেডিও ফ্রিকোএন্সি নার্ভ ব্লক পদ্ধতি

 এটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি যাতে হাঁটুর চারপাশের ব্যথা বহনকারী নার্ভ এর জালিকাগুলিতে ব্যথার সিগন্যাল প্রবাহ থামিয়ে/বন্ধ করে দেয়। এটি একটি US FDA স্বীকৃত/ অনুমোদিত পদ্ধতি যা অত্যন্ত্য কার্যকারী  

কখন ইন্টারভেন্সন পদ্ধতি করা হয়?

যখন রোজকার কাজকর্মের মধ্যে সূঁচ ফোটানোর মতো ব্যথা হয়, এছাড়াও আড়ষ্টভাব, হাঁটার সময়ে হাঁটুতে লক বা শব্দ হওয়া, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামায় কষ্ট হওয়া এবং যেসব কাজে হাঁটুর ব্যবহার জড়িত থাকে সেইসব কাজ করতে অসুবিধা হলে ইন্টারভেন্সন পদ্ধতির কথা ভাবতে হবে। ভিস্কোসাপ্লিমেন্টেশন ও প্লেটলেট রিচ প্লাসমা ইঞ্জেক্সনএ হাঁটুর ব্যথা কম হয় ও হাঁটুর গতিবিধি ভালো হয়। এবং হাঁটুর অষ্টিও আর্থরাইটিস কমাতে সাহায্য করে।

ইন্টারভেন্সন এর পর কি কি করবেন এবং কি কি করবেন না।

  1. ইন্টারভেন্সন-এর পর হালকা ব্যথা বা ফোলা বা তাপ অনুভব করলে বরফের সেঁক দিতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ মত ব্যথার ওষুধ খাবেন।
  2. প্রথম ২ দিনের জন্য বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা, ভারী জিনিস তোলা, অনেক হাঁটাহাঁটি করা এই সব করবেন না। গরম সেঁক দেবেন না।

৫। সার্জারি – যেসব রোগীদের হাঁটুর অষ্টিও আর্থরাইটিস মারাত্মক হয়ে যায় তাঁদের জন্য এটি শেষ বিকল্প। এই পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হাঁটু প্লাস্টিক এবং ধাতুর ডিভাইস দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

হাঁটুর অপারেশন এড়ান

হাঁটুর অপারেশন এড়ানো সম্ভব

অত্যাধুনিক ইনজেকশন/ ইন্টারভেন্সন পদ্ধতি দ্বারাঃ

হাঁটুর ক্ষয় মানেই কিন্তু আর অপারেশন নয়। জেনে নিন কিভাবে কোন পদ্ধতিতে অপারেশন এড়ানো সম্ভব। 

১) প্লেটলেট রিচ প্লাসমাঃ 

প্রত্যেক মানুষের শরীরেই কিছু গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে। রোগীর শরীর থেকে রক্ত নেওয়া হয় এবং এই গ্রোথ ফ্যাক্টরগুলি যে অংশে থাকে, সেই প্লেটলেট অংশ টুকুকে আলাদা করে নেওয়া হয় বিশেষ ফিলটার এবং সেন্ট্রিফিউগেশন পদ্ধতি দ্বারা। তারপর বিশেষ পদ্ধতিতে এটি হাঁটুর নির্দিষ্ট অংশে ইনজেকশন দ্বারা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। 

সারা বিশ্বে এই অত্যাধুনিক পদ্ধতি এখন বেশ জনপ্রিয়। এটি হাঁটুর ক্ষয় রোধ করে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত অংশটুকুকে সারিয়ে তোলে। 

২) ভিস্কো-সাপ্লিমেনটেসনঃ 

হাঁটু জয়েন্ট-এর মধ্যে একটি গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল-এর মত পদার্থ থাকে (যাকে Synovial Fluid বলে) যা হাঁটুর ক্ষয় রোধ করে। হাঁটুর ক্ষয়ের সাথে এই synovial Fluid-ও কমে যায় এবং ঘর্ষণ জনিত হাঁটুর ক্ষয় ক্রমাগত বাড়তে থাকে।

এই পদ্ধতিতে কৃত্তিম Synovial Fluid ইনজেকশন করা হয় হাঁটুর জয়েন্ট -এর মধ্যে। এটিকে Synovial Fluid replacement therapy-ও বলে। 

৩) রেডিওফ্রিকোএন্সিঃ

এটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি যাতে ব্যথা বহনকারী নার্ভগুলিতে ব্যথার সিগন্যাল প্রবাহ থামিয়ে/বন্ধ করে দেয়। এটি একটি US FDA স্বীকৃত/ অনুমোদিত পদ্ধতি যা অত্যন্ত্য কার্যকারী।  

৪) মিলিত পদ্ধতিঃ

যখন অষ্টিও-আরথ্রাইটিস রোগটি অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে যায়, কিছুদিন আগেও অপারেশন এবং হাঁটু বদলানো ছাড়া অন্য কোন ভাল চিকিৎসা ছিল না। কিন্তু উপরের অত্যাধুনিক পদ্ধতিগুলি একত্রে প্রয়োগ করলে অত্যন্ত ভাল ফল পাওয়া যায় এবং হাঁটু বদলানো এড়ানো যায়।

খরচ ও সময় কেমন লাগে? 

চিকিৎসার সময় লাগে একবেলা।

প্লেটলেট রিচ প্লাসমাঃ ভারতীয় মুদ্রায় 10000 টাকা প্রতি হাঁটুতে  

ভিস্কো-সাপ্লিমেনটেসনঃ ভারতীয় মুদ্রায় 22000-26000 টাকা প্রতি হাঁটুতে  

 রেডিওফ্রিকোএন্সিঃ ভারতীয় মুদ্রায় 70000 টাকা প্রতি হাঁটুতে   

প্লেটলেট রিচ প্লাসমা ও ভিস্কো-সাপ্লিমেনটেসন একত্রেঃ ভারতীয় মুদ্রায় 30000 টাকা প্রতি হাঁটুতে   

প্লেটলেট রিচ প্লাসমা, ভিস্কো-সাপ্লিমেনটেসন ও রেডিওফ্রিকোএন্সি একত্রে ঃ ভারতীয় মুদ্রা 85000 টাকা প্রতি হাঁটুতে 
উপরোক্ত খরচ সবকিছু মিলিয়ে, অন্য কোন লুকানো খরচ নেই। 

হাঁটু ব্যথা কেন?

 হাঁটু ব্যথা বিভিন্ন কারনে হয়। নিম্নলিখিত কারণগুলো প্রধান কারন।

  • অষ্টিও-আরথ্রাইটিস (সবচেয়ে বেশি),  
  • রিউম্যাটএড আরথ্রাইটিস
  • স্পনডাইলো-আরথ্রাইটিস
  • প্যাটেলো- ফিমর‍্যাল সিনড্রম 
  • বার্সাইটিস
  • টেনডিনাইটিস
  • রেফারড ব্যথা
  • সংক্রমণ
  • স্লিপ ডিস্ক 
  • চোট/ আঘাত 

অপারেশন এড়ানো যায়

ভেঙ্গে যাওয়া বা বড় চোট আঘাত ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশন এড়ানো সম্ভব। নিচের বাক্সে আপনার প্রশ্ন পাঠান। অথবা ফোন করুন এখানেঃ +৯১৯৩৩৯৬৫৭৮৫৭ ( মোবাইল ও হোয়াটস অ্যাপ)

+৯১৩৩৬৫৫৫৫৫০৬ (সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা) 

আপনার  প্রশ্ন পাঠান